কালো চুল ও সাদা গোলাপের গল্প

 

 

সামছুর বৌটি একটু শ্যামলা। এ নিয়ে তার অনেক আক্ষেপ। রাস্তায় সুন্দরী মেয়ে দেখে ওর মন খারাপ হয়ে যায়। মুখ ফুটে কিছু বলেও না। ওরা কয়েকজন খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলো। বিয়ের পর বন্ধু সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যেই বন্ধুর স্ত্রী দেখতে সুন্দরী হয়, সেই বন্ধুর সাথেই ওর সম্পর্কের ইতি হয়ে যায়। এই নতুন দুঃখটা যোগ হয়েছে তার জীবনে। সে বুঝে, তার বেউ কালো হওয়াতে ওর বন্ধুর কোন হাত নেই বা বন্ধুর স্ত্রী সুন্দরী হওয়ায় সেই তারই বা এমন রাগ হওয়ার তো কোন কারণ নেই। তবুও, সামছুর মন মানে না। সে নিজে নিজেই দগ্ধ হয়। কারো কাছে মুখ খুলে কিছু বলে না। মোবাইল ফোনে ফেসবুক ব্যবহার করার কারণে ওর মন আরও খারাপ। ফেসবুকে এমন কোন মেয়ের ছবি সে দেখে নাই যার চেহারা ওর বউয়ের মতো কালো। ভেতরটা তার জ্বলে পুড়ে যায়। ভাবে, ওর বউটা যদি ফেসবুকের মাইয়াগো মতো দেখতে সুন্দরী হইতো- কতোই না ভালো হইতো। আল্লায় ওর কপালটা খারাপ করছে। বাইছা বাইছা কালো মেয়েটারেই ওর বউ বানিয়ে দিয়েছে। সামছু বউয়ের সাথে ভালো মতো কথাও বলে না। সামছুর বউটা কালো হলেও বুদ্ধিমতি ও মিষ্টি। সে খুব সদালাপি। হাসি ছাড়া কথা বলে না। স্বামীর উপর একটুও রাগ করে না। অনেক সময় মন্দ বাজার করলেও কিছু বলে না। বাড়তি চাহিদাও প্রকাশ করে না। পাশের বাড়ির ভাবি কতো করে বলেছে যে, ওদের বাড়ির ৩৬” কালার টিভিতে সাত ভাই চম্পা দেখার মজাই আলাদা। সে যায় না। তার নিজের ১৭” টিভিতেই সে সন্তুষ্ট। স্বামীর প্রতি সে অন্তপ্রাণ। সামছুকে ফেসবুক ঘাটতে দেখেও কিছু বলে না। সামছু তার বউকে আসলে খুব ভালোবাসে। শুধু মাত্র ঐ গায়ের রংটা নিয়ে একটু ঝামেলা। একদিকে কালো বউ অন্যদিকে ফেসবুকের সুন্দরী বান্ধবীরা। ফেসবুকের উপর থেকেও যেন মন উঠে যেতে চায় সামছুর। আবার ফেসবুকের মেয়েদের দেখার পর বউকে তার আরও কালো মনে হয়। মেজাজটা খিটখিটে হয়ে যায়। 

আজকাল ফেসবুকের একটা মেয়ের সাথে একটু আলাপ সালাপ হয়। বেশ মিষ্টি মেয়ে। সব চেয়ে বড়ো কথা সামছুর দৃষ্টিতে সে খুব সুন্দরী। বউ নায়রে যাওয়ার কারণে প্রায় সারাক্ষণই তার পেছনে লেগে থাকে। প্রথম প্রথম মেয়েটি ৩৩০০০ ভোল্টের শক দিলেও এখন এসি/ডিসি হয়ে গেছে। বউ বাড়ি না থাকায় এদিক ও দিক যেতেও কোন বাধা নেই। সে মেয়েটির সাথে দেখা করার বায়না করলে মেয়েটি রাজি হয়ে গেলো। 

বউকে ফাঁকি দিয়ে অন্য মেয়ের সাথে দেখা করতে যাওয়া অনুচিৎ। অপরাধ। কিন্তু মনটাকে সে বুঝ দিতে পারে নি। শেষ মেষ দেখা করতেই চলে এসেছে। মেয়েটি বলেছিলো, মিষ্টির দোকানের দরজার দিকে পেছন ফিরে দোকানের শেষ টেবিলে বসবে সে। তার খোঁপায় থাকবে সাদা একটা গোলাপ। দোকানের দরজায় দাঁড়িয়ে সামছু তাকে দেখতে পেল এবং ভীরু পায়ে ধীরে ধীরে সে মেয়েটির টেবিলের দিকে অগ্রসর হলো। সামছু যখন মেয়েটির মুখোমুখি বসলো, তার মনে আর কোন ভয় রইলো না।

 -

সাগর আল হেলাল

কলামিস্ট

 ০৮.০২.২০২২


Post a Comment

Previous Post Next Post