কানাই মুন্সীর শিরদাঁড়া সোজা হয়ে যাচ্ছে। কেন হচ্ছে. কিছুতেই বুঝতে পারছেন না কানাই মুন্সী। প্রায় বছরখানেক আগে ঘাড় ও পিঠে ব্যথা পেয়েছিলেন তিনি। সেই থেকে কিছুটা কুঁজো আর নিচু মাথায় চলতে হয় । অভ্যেস হয়ে গেছে। আজ হঠাৎ এমন হচ্ছে বলে খুবই বিরক্ত বোধ করছেন তিনি। এক ভাবে অভ্যেস হয়ে গেলে ব্যতিক্রম ভালো না লাগারই কথা। বাঁ হাতে ঘাড়ের পেছনে চাপ দেন তিনি। নাহ্, কোন কাজ হচ্ছে না। কপাল কুঁচকে পথ চলায় মনোযোগী হন কানাই মুন্সী।
সকালের বাজারে যাচ্ছেন কানাই মুন্সী। শহর থেকে ছেলে, ছেলের বৌ, নাতি-নাতনীরা বেড়াতে এসেছে। দু’দিন থাকবে। গ্রামে খুব একটা আসে না তারা। নাতি-নাতনীদের জন্য খা খা করে কানাই মুন্সীর বুক। কিন্তু ছেলের বৌয়ের ঐ এক কথা- বাচ্চাদের পড়া লেখার ভীষন চাপ। জিপিএ-5 পেতেই হবে। সরকারী ভার্সিটির ভর্তিতে ঝক্কি, বে-সরকারীতে প্রচুর টাকা। সিদ্ধান্ত, ছেলে-মেয়েকে বিদেশে পড়ানো হবে। এখন থেকেই চলছে প্রস্তুতি।
বাজারের কেনা-কাটার ঝামেলায় শিরদাঁড়ার বিষয়টা ভুলতে বসেছিলেন কানাই মুন্সী। সকালের বাজারে আজকাল আসাও হয় না, মফিজের দোকানের চা-ও খাওয়া হয় না। কয়েক জন পরিচিত বন্ধু দোকানে বসে চা পানে মশগুল। ঘাড়ে ব্যথা পেয়ে শরীরের অবস্থা পরিবর্তন হওয়ায় বন্ধুদেরকে তিনি এড়িয়েই চলেন। ঘাড়ের কথা মনে পড়ায় আবার খারাপ হয়ে যায় মনটা। নাহ্, বিরক্তিকরভাবে ঘাড় সোজা হয়ে যাচ্ছে। চায়ের দোকানের উল্টো দিকে ডাক্তার পতিত বাবুর ডিস্পেন্সারী। বন্ধু মানুষ। তার সাথে বিষয়টি আলোচনা করলে কেমন হয় ? যেই চিন্তা, সেই কাজ।
ডাক্তার ওনার বন্ধু। পুরো বিষয়টা তিনবার শুনলেন। তারপর বললেন-
- বল, আবার প্রথম থেকে বল !
- একই কথা বারবার বলতে ভাল্লাগছে না। তোর কাছে কোনো ওষুধ থাকলে দে। না হলে যাই।
- ওষুধ ! আয় আয়, বুকে আয়। তোর রোগটা যে আমারো হয়ে গেলো !
- মানে ?
ডাক্তার বাবু কানাই মুন্সীকে বুকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় কানে কানে বললেন- ভুলে গেছিস ? মনে করে দ্যাখ সেদিনের কথা। আজ ২৬শে মার্চ।
-
সাগর আল হেলাল
২৫.০৩.২০২২
Post a Comment