জীবনানন্দের কবিতা থেকে



দুধের বাচ্চাটি কাল হলো জমিলার। পোয়াতি বানিয়ে সোয়ামী নিখোঁজ। কেউ কেউ বলে- ও আর বেঁচে নেই। ছ্যাঁৎ করে ওঠে জমিলার বুকটায়। সোয়ামীর ঘামের গন্ধ এখনো লেগে আছে তার সারা গতরে। কী সুদর্শন আর হৃষ্টপুষ্ট ছিলো মানুষটা। তার সান্নিধ্য পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পিছু ছাড়েনি জমিলার। তার সামনে এখন দুইটিই পথ। হয় পেট বাঁচানো, নয় সতীত্ব। ছেলেটা বড়ো হয়ে যদি জানতে পারে তার মা দেহ বিক্রী করেছে, কী ভাববে সে ? জমিলা যেন ভবিষ্যৎ দেখতে পায়। লম্বা করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
বটতলা মন্দীরের পাশে ফুটফুটে এক বাচ্চা কাঁদে। যে দ্যাখে তারই মায়া লাগে। কার না কার বাচ্চা, ছুঁতে ভয় পায় পুঁজোয় আসা মানুষেরা। যুগে যুগে যশোদারা আসেন সন্তান পালনের দায়িত্বে। অল্প বয়সের বিধবা মালতী দেবী শিশুটিকে বুকে টেনে নেন। কপালে চুমু দেন, ডাক দেন কানাইয়া বলে। দূর থেকে চেয়ে দ্যাখে জমিলা।
জমিলার ছেলে বড়ো হয়েছিলো মালতী দেবীর ঘরে। কানাইয়া নামে।
তিনদিন আগে টিএসসিতে দুষ্কৃতকারীর চাপাতি আঘাতে নিহত হয়েছেন ৩৮ বছরের পরিণত যুবক কানাই। আজ প্রেস ক্লাবের সামনে তার বিচারের দাবীতে মানববন্ধন। গত তিনদিন সংবাদপত্রে কানাইয়ের হত্যার দায় মৌলবাদী বিভিন্ন সংগঠনের নামে এসেছে। সরকারী পর্যায় থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সুষ্ঠুু তদন্ত ও ন্যায় বিচারের। র‌্যাব, পুলিশ, ডিবি, সকল মিডিয়ার লোকজন এই হত্যাকাণ্ডের শেকড় উদ্ধারের কসম খেয়েছে।
মালতী দেবী একটি প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে। আর একজন মানুষও আসেনি। মানববন্ধনের আয়োজকদের মধ্য থেকেও কাউকে দেখা যাচ্ছে না। কপালে ভাঁজ পড়ে মালতী দেবীর। এরইমধ্যে, প্ল্যাকার্ড হাতে অন্য আর একজন নারী এসে যোগ দেয় মানববন্ধনে। জমিলা।
-

সাগর আল হেলাল
০৪.০৩.২০২২
-


Post a Comment

Previous Post Next Post